বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৬ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: বঙ্গবন্ধুর পলাতক চার খুনি শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পাওয়া বীরত্বের খেতাব স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
সেই সঙ্গে এ চার জনের খেতাব বাতিলে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও মন্ত্রীপরিষদ সচিবকে নির্দেশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার রুলসহ এই আদেশ দেয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও আশরাফুজ্জোহা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তারা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু পরবর্তীতে বীরত্বের যে খেতাবগুলো দেওয়া হয়েছে, সেটা তাদের কারো অধিকার না। রাষ্ট্র তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে, রাষ্ট্র চাইলে সে খেতাব কেড়েও নিতে পারে।”
তিনি জানান, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রীয় খেতাব বিবেচনা-পুনর্বিবেচনার জন্য কমিটি রয়েছে। সেই কমিটিগুলো যে পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন দেয়, তার ভিত্তিতে খেতাবের স্বীকৃতি বহাল রাখা হয় বা বাতিল করা হয়।
“আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো কমিটি সরকার করেনি। আমাদের রিটের আবেদনে সে ধরনের কমিটি গঠনের কোনো আরজি না থাকলেও রুল শুনানিতে বিষয়টি আমরা আদালতে তুলে ধরব।”
১৯১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯০০ সৈনিকের বীরত্বের খেতাব বাতিল করা হয়েছিল জানিয়ে এ আইনজীবী বলেন, “রাষ্ট্রীয় খেতাবধারী কেউ যদি অসদাচরণ করে, বা কেউ যদি দণ্ডিত হয়, বা অবৈধ কাজ করে, যা খেতাবের মর্যাদার বিপরীত বা মর্যাদাহানীকর, সেক্ষেত্রে খেতাব বাতিল করা হয় বিভিন্ন দেশে।
“এই চারজনের খেতাব বাতিল চাওয়া হয়েছে, কারণ তারা অপরাধী হিসেবে দণ্ডিত। একজন দণ্ডিত অপরাধীর রাষ্ট্রীয় খেতাব থাকতে পারে না। এটা রাষ্ট্রের সংবিধান, আইনকে কলুষিত করে।”
রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাই কোর্ট বঙ্গবন্ধুর পলাতক চার খুনির খেতাব স্থগিত রাখতে বলেছে বলে জানান এই আইনজীবী।
জাতির পিতাকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই চারজনের খেতাব বাতিল চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাশ গত ১ ডিসেম্বর এই রিট আবেদন করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯৭৩ সালে ৭ জনকে বীরশ্রেষ্ঠ, ৬৮ জনকে বীর উত্তম, ১৭৫ জনকে বীর বিক্রম ও ৪২৬ জনকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হয়। পরে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর এ বিষয়ে গেজেট জারি করা হয়।
সেই গেজেট ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর পলাতক ছয় খুনির অন্যতম নূর চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর বিক্রম, শরিফুল হক ডালিমের নামের সঙ্গে ‘বীর উত্তম’, রাশেদ চৌধুরীর নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিন খানের নামের সঙ্গে ‘বীর প্রতীক’ উপাধি রয়েছে।
ওই তালিকা সর্বশেষ হালনাগাদ করা হয়েছে ২০১৫ সালের ১১ অগাস্ট। অথচ ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ওই চারজনসহ মোট ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে ঢাকার দায়রা জজ আদালত। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর আপিল বিভাগ সেই মামলার চূড়ান্ত রায় দেয়।